চীনের সঙ্গে পূর্ব লাদাখ সীমান্তে ভারতের যখন উত্তেজনা চলছে, তখন উত্তর লাদাখ সীমান্তে পাকিস্তান প্রায় ২০ হাজার সেনা মোতায়েন করেছে। উত্তর লাদাখের গিলগিট বালতিস্তান অঞ্চলে এসব সেনা মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ অবস্থায় গত কয়েক দিনে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সঙ্গে দেশটির গোয়েন্দাদের একাধিক বৈঠকে হয়েছে। সেখানে ঘুরে ফিরে একটি প্রশ্নই বার বার উঠেছে যে, ভারতকে কি ঘিরে ধরছে প্রতিবেশীরা?
কূটনৈতিক সূত্রের বরাত দিয়ে ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো বলছে, চীন, পাকিস্তান এবং নেপাল ও ভুটান উত্তরে ভারতকে পশ্চিম থেকে পূর্বে ঘিরে রেখেছে। যার পুরোটাই দুর্গম হিমালয় অঞ্চল। এ ছাড়া লাদাখের এক প্রান্তে রয়েছে পাকিস্তান এবং অন্য প্রান্তে রয়েছে চীন।
বর্তমানে পূর্ব লাদাখে চীনের সঙ্গে ভারতের উত্তেজনা চলছে। গত ১৫ জুন এই সীমান্তেই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে দুই দেশের সেনারা। এতে অন্তত ২০ ভারতীয় সেনা নিহত হয়। এর পর উত্তেজনা চরম পর্যায়ে পৌঁছায়। ইতোমধ্যে দফায় দফায় কোর কম্যান্ডার পর্যায়ে দুই দেশের মধ্যে বৈঠক হয়েছে। এমনকি গতকাল বুধবারও চীন-ভারত সীমান্ত চুসুলে বৈঠক করেছে দুই দেশের সেনাবাহিনী। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো সমাধানে আসতে পারেনি দুই দেশ।
তবে আলোচনা চলমান রাখার পাশাপাশি ভারতও লাদাখে সেনা সমাবেশ করছে। সরকারিভাবে প্রায় ১০ হাজার সেনা মোতায়েনের কথা বলা হলেও সেনা সূত্র বলছে, সীমান্তে এর চেয়েও অনেক বেশি সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। সেইসঙ্গে ট্যাঙ্ক ও অন্যান্য যুদ্ধের সরঞ্জাম পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয় গণমাধ্যম বলছে, লাদাখের লে বিমানঘাঁটিতে প্রস্তুত রয়েছে ভারতীয় বিমানবাহিনী। ৬০ দিনের জন্য ওই এলাকায় রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। বিমানবাহিনী দাবি করছে, ভারতীয় ফাইটার জেট মাত্র ৮ মিনিটে সীমান্তে গিয়ে অপারেশন চালিয়ে ফের ঘাঁটিতে ফিরে আসতে পারে।
অন্যদিকে, চীনও প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় সেনা সমাবেশ করেছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, দেশটিও প্রায় ভারতের সম-সংখ্যক সেনা সমাবেশ করেছে। এ ছাড়া প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার খুব কাছে তিনটি এয়ারস্ট্রিপে বিমানবাহিনীকে প্রস্তুত রেখেছে চীন।
গোয়েন্দা রিপোর্টে জানা যায়, উত্তর লাদাখে গিলগিট বালতিস্তান ছাড়াও জম্মু-কাশ্মির সীমান্তেও সেনা সংখ্যা বাড়িয়েছে পাকিস্তান। সেইসঙ্গে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের ভেতরেও পাকিস্তানপন্থী একটি গ্রুপ রয়েছে।
অন্যদিকে, নেপালের সঙ্গেও সীমান্ত নিয়ে ভারতের উত্তেজনা চলছে। ইতোমধ্যে ভারতের দাবি করা এলাকা নিয়ে নতুন মানচিত্র প্রকাশ করেছে কাঠমান্ডু। সেই মানচিত্র অনুমোদনে পার্লামেন্টে সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাবও পাস হয়েছে। এ ছাড়া সম্প্রতি সীমান্তে নেপাল পুলিশের গুলিতে ভারতীয় নাগরিক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। নয়াদিল্লি অভিযোগ করছে, এর পেছনে বেইজিংয়ের উস্কানি রয়েছে।
এই অবস্থার মধ্যেই কয়েক দিন আগে খোদ ভারতীয় গণমাধ্যম দাবি করে, ভুটান আসাম সীমান্তে পানির প্রবাহ বন্ধ করে দিয়েছে। এতে সেখানকার হাজার হাজার কৃষক চাষাবাদ করতে পারছেন না।
ভারতীয় গোয়েন্দারা আশঙ্কা করছেন, এই অবস্থায় যদি যুদ্ধ শুরু হয়, তাহলে ভারতের উত্তর-পূর্ব থেকে উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত গোটাটাই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে। দেশটির সেনাবাহিনীকেও সেই আশঙ্কার কথা জানানো হয়েছে।
Leave a Reply