নভেল করোনাভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের অর্থনীতির প্রায় সব খাতে। ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে প্রণোদনা প্যাকেজসহ নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সরকারের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে করোনাপরবর্তী অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগের প্রস্তাব করেছে এ খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ সোলার অ্যান্ড রিনিউয়েবল এনার্জি অ্যাসোসিয়েশন (বিএসআরইএ)। আগামী তিন থেকে পাঁচ বছরে ৪৩ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব করেছে সংগঠনটি।
প্রান্তিক অঞ্চলে শতভাগ বিদ্যুতায়ন, কৃষি উৎপাদন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কমিউনিটি ক্লিনিক, সাইক্লোন শেল্টার, প্রান্তিক সড়ক আলোকায়নসহ বিভিন্ন কাজে বিনিয়োগ করা হবে এসব অর্থ। সম্প্রতি সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে এ বিনিয়োগ প্রস্তাব পাঠিয়েছে বিএসআরইএ।
এতে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে সরকারের ‘আমার শহর, আমার গ্রাম’ ইশতেহার বাস্তবায়নে। গ্রামে গ্রামে সোলার প্লান্টের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন, সোলার পাম্প ব্যবহার করে পানির চাহিদা পূরণ, বায়োগ্যাস প্লান্টের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহসহ কৃষি ও খামারেও সোলার প্রযুক্তি ব্যবহারসহ নানামুখী উদ্যোগ নেয়ার কথা বলা হয়েছে। এজন্য গ্রামপ্রতি খরচ হতে পারে ৮০ লাখ টাকা। সার্বিকভাবে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সরকারের খরচ হতে পারে ২৪ হাজার কোটি টাকা।
কৃষি সেচকাজে সোলার যন্ত্রের ব্যবহার বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে বিএসআরইএ। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বর্তমানে দেশে প্রায় ১৩ লাখ ডিজেলচালিত সেচ পাম্প ব্যবহার হচ্ছে। সোলার প্রযুক্তির মাধ্যমে অন্তত দুই লাখ পাম্প ব্যবহার করা সম্ভব আগামী তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে। এজন্য আড়াই হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে।
দেশের বিদ্যুতের চাহিদা পূরণে ৫০০ মেগাওয়াটের একটি অস্থায়ী সোলার পাম্প নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। অব্যবহূত জলাভূমিতে পাম্পটি নির্মাণের পক্ষে মত দিয়েছে বিএসআরইএ। এজন্য ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ৩ হাজার কোটি টাকা। একইভাবে দেশে উৎপাদিত খাদ্যশস্য সংরক্ষণে সোলার ও ডিজেলের সমন্বয়ে হাইব্রিড মিনি কোল্ড স্থাপনের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। দেশের অন্তত ৫০০টি প্রান্তিক এলাকায় এ ধরনের কোল্ড স্টোরেজ নির্মাণ সম্ভব বলে জানিয়েছে সংগঠনটি।
দেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতেও নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে বিএসআরইএ। দেশের অন্তত ৫০০টি প্রান্তিক এলাকার কমিউনিটি ক্লিনিকে নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হতে পারে ৭৫ কোটি টাকা। একই পদ্ধতিতে দেশের প্রান্তিক এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও বিদ্যুতায়ন সম্ভব। এজন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২০ লাখ টাকা।
শিল্প খাতের জন্যও নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। কারখানার ছাদে সোলার প্রকল্পের মাধ্যমে বিদ্যুৎ খরচ কমিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করছে বিএসআরইএ। এজন্য সরকারের কাছ থেকে ৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
সাইক্লোন শেল্টার ও প্রান্তিক এলাকার সড়কগুলোও নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করে বিদ্যুতায়নের প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ সোলার অ্যান্ড রিনিউয়েবল এনার্জি অ্যাসোসিয়েশন। তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে ৩০০ কোটি টাকা খরচ করে সাইক্লোন শেল্টার বিদ্যুতায়ন প্রকল্প ও ৮ হাজার কোটি টাকা খরচ করে প্রান্তিক সড়কগুলোতে লাইটের ব্যবস্থা করার প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
বিএসআরইএ সভাপতি দীপাল চন্দ্র বড়ুয়া বণিক বার্তাকে বলেন, কভিড-১৯ পরিস্থিতির প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে। পরিবেশের পাশাপাশি কর্মসংস্থানের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই আগামী দিনগুলোতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানিনির্ভর করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সরকারের। এর অংশ হিসেবেই বিভিন্ন খাতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে বিনিয়োগের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, বর্তমানে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ২৪ হাজার মেগাওয়াট। নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৬২৮ মেগাওয়াট। এর মধ্যে সৌরবিদ্যুৎ ৩৯৪ মেগাওয়াট ও জলবিদ্যুৎ ২৩০ মেগাওয়াট। এছাড়া বায়ুবিদ্যুৎ ছাড়াও বায়োগ্যাস প্লান্ট থেকেও বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে।
Leave a Reply