এযাবতকালের সবচেয়ে কড়া ভাষণ দিলেন জাতিসংঘের মহাসচিব। বিশ্ব ব্যবস্থা নিয়ে এতোটা অসন্তোষ সহকারে কোনো মহাসচিব এমন ভাষায় কখনো বক্তব্য দেননি। মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সমতার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক অগ্রগতি নিয়ে যেসব গালগল্প, ভনিতা আর মিথ্যাচার চলছে তাকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেছেন।
অভূতপূর্ব কড়া ভাষার এ বক্তৃতায় গুতেরেস জাতিসংঘ নিরাপত্তা কাউন্সিলের বড় ধরনের সংস্কারের ওপর জোর দিয়েছেন। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এবং বিশ্ব ব্যাংকেরও সংস্কার প্রয়োজন বলে আওয়াজ তুলেছেন তিনি।
করোনাভাইরাসের এই বৈশ্বিক মহামারীর সময় এসে যেভাবে বিশ্বব্যাপী পদ্ধতিগত বৈষম্য ও অসাম্য স্পষ্ট হয়ে উঠেছে সেদিকে ইঙ্গিত করেই এমন বক্তব্য দেন জাতিসংঘ মহাসচিব।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্যসেবা সঙ্কট বিশ্ব ব্যবস্থার দুর্বলতা ও ভঙ্গুরতাকে উলঙ্গ করে ফেলেছে। এটি দেখিয়ে দিয়েছে কতো বড় ঝুঁকি আমরা দশকের পর দশক ধরে উপেক্ষা করে গেছি। অপ্রতুল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার ফাঁক, কাঠামোগত অসাম্য, পরিবেশগত অবনতি এবং জলবায়ু পরিবর্তন সঙ্কট এসব ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে এই দুর্বল বিশ্ব ব্যবস্থা।
তিনি আরো বলেন, এই মহামারী সব জায়গার প্রবঞ্চনা এবং মিথ্যাচারকে প্রকাশ করে দিয়েছে: মুক্তবাজার অর্থনীতি সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পারবে এই মিথ্যা এখন স্পষ্ট। অবৈতনিক স্বাস্থ্যসেবার গালগল্প কাজ করছে না, আমরা এক বর্ণবাদ উত্তর দুনিয়ায় বসবাস করছি এই বিভ্রম এবং আমরা সবাই এক নৌকার যাত্রী এই মিথ্যাচার ও গালগল্প আজ পরিষ্কার।
হ্যাশট্যাগ মিটু এবং ব্ল্যাক লাইভস মেটার আন্দোলন হলো এই ভ্রান্তি নিসরনের এক চরম প্রকাশ। ঔপনিবেশিকতা এবং পুরুষতান্ত্রিকতা ঐতিহাসিকভাবে বৈষম্যের উৎস বলেও উল্লেখ করেন জাতিসংঘ মহাসচিব। সেই ঔপনিবেশিক ঐতিহ্যেরই প্রতিধ্বনি এখনো শোনা যাচ্ছে, যোগ করেন গুতেরেস।
নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদরদপ্তরে বাৎসরিক নেলসন মেন্ডেলা লেকচার দেয়ার সময় এভাবেই ক্ষোভ উগড়ে দেন আন্তোনিও গুতেরেস। মেন্ডেলার ১০২তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে এই ভাষণ দেন তিনি। আর এই ঐতিহ্যের ১৮ বছরের মধ্যে এবারই প্রথম অনলাইনে ভাষণ দিলেন জাতিসংঘ মহাসচিব।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান
Leave a Reply