বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি (বাপেক্স) এর কার্যক্রম নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
তিনি বলেছেন, বাপেক্সই একমাত্র প্রতিষ্ঠান যাদের কর্মীরা কাজ বাদ দিয়ে শুধু সমালোচনা করেন। সরকার বাপেক্সকে শক্তিশালী করতে কাজ করলো কিন্তু বাপেক্স শক্তিশালী হতে পারলো না। এই দায় কার সেটি চিন্তা করে না।
শনিবার প্রতিমন্ত্রী অনলাইনে এনার্জী এন্ড পাওয়ার পত্রিকা আয়োজিত ‘ইপি টকস : এক্সপ্লোরেশন এন্ড ম্যানেজমেন্ট চ্যালেঞ্জেস ফর বাপেক্স’ শীর্ষক ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ সব কথা বলেন।
এসময় তিনি বলেন, এখানে আন্তর্জাতিক মানের কোনো কর্মী নেই। বাপেক্সের সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রচেস্টা অব্যাহত রাখা হবে। আন্তর্জাতিক মানে গ্যাস অনুসন্ধান, উত্তোলন/উৎপাদন কোম্পানি হিসেবে দেখতে চাই। উন্নয়ন কাজ পরিচালনার জন্য আমাদের প্রচুর গ্যাস লাগবে। হাই প্রেসার জোনে গ্যাস খোঁজা বা হরিজন্টাল এক্সপ্লোরেশনে গ্যাস উত্তোলনের জন্য বিশেষজ্ঞ প্রয়োজন।
বাপেক্সকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়া হবে কিন্তু বাপেক্সকেই ঠিক করতে হবে তারা তাদের অবস্থান কোথায় দেখতে চায়। বাপেক্সের সাফল্য ভালই। বিদেশি কোম্পানির সাথে বাপেক্স সমান্তরাল ভাবে কাজ করলে দক্ষতা ও আত্মবিশ্বাস আরো বাড়বে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রতিষ্ঠানটিকে শক্তিশালী হিসেবে গড়ে তুলতে চাইলেও কর্মীরা তা করে দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন। এখানে আন্তর্জাতিক মানের কোনও কর্মী নেই। অতীতেও তেমন কেউ ছিলেন না। শুধু সরকারের কাছ থেকে অনুদান নিয়ে চলার চিন্তা বাদ দিয়ে স্বাবলম্বী হতে হবে।
এসময় বাপেক্সের আবিষ্কৃত গ্যাস ক্ষেত্র বিদেশি কোম্পানির হাতে ছেড়ে দেওয়া, বাপেক্সকে কাজ করতে না দেওয়া, গ্যাস উন্নয়ন তহবিলের অর্থ অনুদানের বদলে ঋণ হিসাবে দেওয়া নিয়ে অনুষ্ঠানে বক্তারা সরকারের সমালোচনা করেন।
বাপেক্স এর জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল করার দাবি প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এটি বাপেক্স চায় কিনা সবার আগে সেই বিচার করতে হবে।
তিনি বলেন, টেংরাটিলা বিস্ফোরণে আদালত যখন প্রশ্ন করলো এখানে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে এমন কথা তো বাপেক্স এর এমডিও জানতেন। তাহলে তিনি কেন সই করছেন? তখনকার এমডি আদালতকে বলেছেন, তিনি তো ভূতাত্ত্বিক। তিনি খনন প্রকৌশলী নন। এই হচ্ছে বাপেক্স এর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের অবস্থা।
বাপেক্সকে আন্তর্জাতিক কোম্পানিতে রূপান্তরের দাবি সম্পর্কে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এজন্য যে দক্ষ জনবলের দরকার বাপেক্সে এখন তেমন কেউ নেই। অতীতে যারা কাজ করেছেন তাদের মধ্যেও কেউ নেই। বাপেক্স এর কূপ খনন করার মহা-পরিকল্পনা তারাই দিয়েছিল। কিন্তু পরে দেখা গেল তারা ড্রিলিং লোকেশনই দিতে পারে না।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, তারা যদি এমন কাজ করে তাহলে আমাদের কী করার আছে। রাজনৈতিক নেতারা তো ভূতাত্ত্বিক নয়।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাপেক্সকে গ্যাস উন্নয়ন তহবিলের অর্থ অনুদান হিসেবে দিতে হবে এমন দাবি এসেছে। কিন্তু লিল্লার টাকা দিয়ে একটি কোম্পানি কিভাবে পরিচালিত হবে। অনন্ত কাল এভাবে চলতে পারে না।
তিনি বলেন, বিদেশি কোম্পানিকে কাজ দেওয়া হচ্ছে কারণ বাপেক্স সব পারছে না। ওদের চারটা রিগ এখন ব্যস্ত তাহলে আর কাজ কে করবে। বিদ্যুতে যদি বেসরকারি কোম্পানি কাজ করতে পারে তাহলে গ্যাসে কেন নয়।
এসময় বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহম্মদ আলী বলেন, মন্ত্রণালয় নির্দেশনায় ছয় মাসের কাজের কর্মপরিধি ঠিক করা হয়েছে। বাপেক্স এখন চারটি রিগ (খনন যন্ত্র) চার জায়গায় কাজ করছে। ২০০৯ সাল ২০২০ সাল পর্যন্ত ১৭টা নতুন গ্যাস স্ট্রাকটার চিহ্নিত করেছি। বাপেক্স এখন ৩২টি প্রকল্পে কাজ করছে। তিনি বাপেক্স এর কর্মকা- তুলে ধরেন।
মূল প্রবন্ধে বাপেক্স এর সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোর্তজা আহমেদ চিশতি ছাতকে গ্যাস উত্তোলনের ওপর জোর দেন।
তিনি বলেন, এ ক্ষেত্র থেকে তৃতীয়মাত্রার জরিপ শেষে দ্রুত গ্যাস উত্তোলন প্রয়োজন। ক্রমান্বয়ে বিবিয়ানা গ্যাস উত্তোলন কমতে শুরু করেছে। এই ক্ষেত্রের গ্যাস কমে গেলে বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানি করে চাহিদা মেটাতে হবে। এজন্য ছাতক গ্যাস ক্ষেত্র থেকে উত্তোলনের উদ্যোগ নেওয়া উচিত।
তিনি বলেন, বাপেক্স এর ব্যবস্থাপনা কমিটির বেশিরভাগ সদস্যর কোনও কারিগরি জ্ঞান থাকে না। বাপেক্স বোর্ডে অভিজ্ঞদের নিয়োগ দেওয়ার ওপর জোর দেন তিনি। এজন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরামর্শক নিয়োগ এবং বাপেক্স এর দক্ষ জনবল নিয়োগ দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
এনার্জী এন্ড পাওয়ার পত্রিকা সম্পাদক মোল্লাহ আমজাদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মাঝে বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ডঃ ম তামিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডঃ বদরুল ইমাম, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ খন্দকার সালেক সুফি, বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী ও পেট্রোবাংলার সাবেক চেয়ারম্যান মোকতাদির আলী সংযুক্ত থেকে বক্তব্য রাখেন।
Leave a Reply